মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
চাল-ডাল, তেল-লবন-চিনি, মাছ-মাংস, ডিম-দুধ, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস উঠছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
গত (১৮ ফেরু্রয়ারি) শুক্রবার সন্ধ্যায় শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে জেলা এনডিএফথর সভাপতি শহীদ সাগ্নিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় বক্তারা এই অভিযোগ করে বলেন দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত। তার উপর সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা এবং সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য ৬২ টাকা বৃদ্ধি করে এখন গৃহস্থালীতে ব্যবহার্যসহ সকল ক্ষেত্রে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণ বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে যা আগামী মার্চে গণশুনানির নামে নাটক করে চুড়ান্ত করতে চলেছে। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিরও পাঁয়তারা চলছে। গাড়িভাড়া, লঞ্চভাড়া, বাড়িভাড়া, ঔষুধপত্র, চিকিৎসা ব্যয়ের ধারাবাহিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনসাধারণের বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দফায় দফায় পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, সয়াবিন তেল ও নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে শ্রমিক, শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যাপক জনগণের জীবন ও জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জনগণের জীবন-জীবিকার সকল প্রয়োজনীয় বিষয় রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ব্যবসায়ীদের অবাধ লুটপাট ও লাগামহীন বাণিজ্যক্ষেত্রে পরিণত করেছে। করোনাকালে একদিকে যেমন নতুন করে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে চলে গেছেন, তার বিপরীতে লুটপাটের কারণে ২০২০ সালেই দেশে নতুন করে ১০ হাজার ৫১ জন নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। অথচ সরকারের মন্ত্রীরা নির্লজ্জের মতো বলে বেড়াচ্ছেন ‘দেশের জনগণ নাকি ঘুমের মধ্যে বড়লোক হয়ে যাচ্ছেথ ‘মানুষ বেশি খাচ্ছে বলে চালের দাম বাড়ছেথ! সরকার উন্নয়নের যে গালভরা বুলি আওড়াচ্ছে তা মূলত সাম্রাজ্যবাদী লগ্নিপুঁজির সর্বোচ্চ মুনাফার লক্ষ্যে সড়ক, রেল, নৌপথসহ অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ আর সর্বোচ্চ লুটপাট ছাড়া আর কিছুই নয়। সভা থেকে দেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের জরুরী সমস্যা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
জেলা এনডিএফথর সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহাবায়ক ডা. অবনী শম্র্মা, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রবাসীনেতা আফজাল চৌধুরী, ধুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শম্র্মা, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক আম্বিয়া বেগম, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তারেশ চন্দ্র দাশ, মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ সোহলে মিয়া, চা-শ্রমিক সংঘের নেতা সন্যাসী নাইড়ু, সথমিল শ্রমিক সংঘ কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ মোস্তাক মিয়া, জেলা এনডিএফথর কোষাধ্যক্ষ মোঃ শাহিন মিয়া, সদস্য শাহজাহান আলী, গিয়াস উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম রাজিব প্রমূখ। সভায় বক্তারা আরও বলেন সমগ্র পুঁজিবাদী-সাম্রজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থা এক গভীর ও সামগ্রিক সংকট, দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, আঞ্চলিক ও স্থানিক যুদ্ধের প্রক্রিয়ায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে। ইউক্রেন ইস্যুতে রুশ সীমান্তে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাথে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার মুখোমুখি অবস্থান ও ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্তির তৎপরতাকে রাশিয়ার রেড লাইন ঘোষণা এবং তাইওয়ান স্বাধীনতার ইস্যু নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও বৃহত সাম্রাজ্যব দের লক্ষ্যে অগ্রসরমান পুঁজিবাদী চীনের মুখোমুখি অবস্থান ও তাইওয়ান স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তাকে চীনের রেড লাইন ঘোষণা বিশ্ব পরিস্থিতিকে উত্তেজনাকর করে তুলেছে। আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভবনা মূর্ত হয়ে উঠেছে। সাম্রাজ্যবাদীরা জোরদার করছে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুুতিকে। তাদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতি থেকে আমাদের দেশও মুক্ত নয়। ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব সুতীব্র। তার প্রতিফলন ঘটছে মার্কিনের ‘গণতন্ত্র সম্মেলনেথ বাংলাদেশ আমন্ত্রণ না জানানো এবং র্যাব ও র্যাবের বর্তমান ও সাবেক ডিজিসহ ৭ কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রদানের মধ্য দিয়ে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির এ রকম জটিল পরিস্থিতিতে সকল সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দালালদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন তুলতে হবে।